মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০২:৪৪ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
কাল ঢাকায় আসছেন ডোনাল্ড লু, যা বলছে প্রধান দুই দল ঢাকা মহানগর পুলিশের এক সহকারী কমিশনার বদলি বিএসএফের পোশাকে সীমান্তে মাদকের কারবার করতেন রেন্টু কুতুবদিয়ায় নোঙর করেছে এমভি আবদুল্লাহ ভারতে চতুর্থ দফা লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ ও কাশ্মিরে কেমন ভোট হলো বিভাজন থেকে বেরিয়ে এসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা উচিত : মির্জা ফখরুল মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা বেআইনি : হাইকোর্ট আমার পুরো ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছিল : মনোজ মানবদেহে প্রথম ব্রেইনচিপ ইমপ্লান্টে ধাক্কা খেলো নিউরালিংক ফিলিস্তিনপন্থিদের বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ অধ্যাপক গ্রেপ্তার
ছোট কাজে বড় দুর্নীতি

ছোট কাজে বড় দুর্নীতি

স্বদেশ ডেস্ক:

কাজ শুরুর ২০ দিন পরই সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়েছে দেখিয়ে তুলে নেওয়া হয়েছে পুরো টাকা। অথচ চার মাস পরও কাজের ১৫ শতাংশ হয়েছে বলে জানিয়েছে তদারক কমিটি। টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে বিধি মোতাবেক তদারক কমিটির সদস্য সচিবের স্বাক্ষরও নেওয়া হয়নি। তার ক্রয় ও মিস্ত্রি ব্যয় বাঁচাতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি) না লাগিয়েই কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। ২৪ ইঞ্চি ড্রেন নির্মাণ করার কথা থাকলেও মাত্র ছয় ইঞ্চি পর্যন্ত করা হয়েছে। মেরামত/সংস্কারকাজের ৭টি, ২টি মডিউল ট্রেন্ড ও একটি ড্রেন নির্মাণের ৭১ লাখ টাকার কাজে এমন নয়-ছয় হয়েছে খাগড়াছড়ি-৬ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন)।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ৭১ লাখ টাকার এ ঠিকাদারিতে অনিয়ম দেখেও বাধা দেননি খাগড়াছড়ি ৬ এপিবিএনের তৎকালীন অধিনায়ক (বর্তমানে মাদারীপুরের এসপি) পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান। অভিযোগ রয়েছে, এর বিনিময়ে অধিনায়ক মাহবুব হাসান মোটা অঙ্কের ঘুষ গ্রহণ করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে।

এদিকে সংস্কারকাজে এমন অনিয়ম-দুর্নীতি দেখে তদারকি কমিটির সদস্য সচিব এবং ৬-এপিবিএনের তৎকালীন উপ-অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ নোট অব ডিসেন্ট প্রদান করেন। এতে কাজে অনিয়মের ভিডিওচিত্র ও ছবি যুক্ত করেন তিনি। অবস্থা প্রতিকূল দেখে ব্যাকডেটে (পেছনের তারিখ) অন্য আরেক কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব হিসেবে দেখিয়ে আরেকটি তদারক কমিটি গঠন করেন অধিনায়ক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান। পুরো বিষয়টি এখন তদন্ত করা হচ্ছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।

২০১৮ সালের ১ মার্চ ৪৬ লাখ টাকার ৭টি মেরামত/সংস্কার দরপত্রের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া সাড়ে ১১ লাখ টাকার দুটি মডিউল ট্রেন্ড এবং ১৪ লাখ টাকার ড্রেন নির্মাণের কাজও ছিল। এর মধ্যে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি ৬-এপিবিএনের সহ-অধিনায়কের বাংলো, ফোর্সের রেশন স্টোর, ফোর্সের ২টি ব্যারাক (আধাপাকা), ২টি পরিদর্শক কোয়ার্টার, ফোর্সের ১৫ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল (আধাপাকা) মেরামত/সংস্কারের কাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল। ৩ মার্চ ৬-এপিবিএনের তৎকালীন অধিনায়ক মাহবুব হাসানকে সভাপতি ও উপ-অধিনায়ক শাহনেওয়াজ খালেদকে সদস্য সচিব করে সংস্কারকাজের তদারকি কমিটি গঠন করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাজ শুরুর মাত্র ২২ দিন পর শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে মর্মে প্রত্যয়ন করেন ৬-এপিবিএনের তৎকালীন অধিনায়ক মাহবুব হাসান। এর পর সংস্কারকাজের বিল বাবদ ৪৬ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। অথচ এর চার মাস পর সংস্কারকাজ প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়, কাজ মাত্র ১৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। পরের মাসে আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, কাজ মাত্র ২৫ শতাংশ শেষ হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এপিবিএনের হিসাবরক্ষক রতন ৪৬ লাখ টাকা তুলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স মিশু এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মো. জসিম ও ৬-এপিবিএনের অধিনায়ক মাহবুব হাসানের কাছে দেন। তখন তারা দুজন একটি কক্ষে ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, ওই টাকা থেকে মাহবুব হাসানকে ১৫ লাখ টাকা দেন ঠিকাদার জসিম।

সূত্র জানায়, ৭টি মেরামত/সংস্কারকাজের কোনোটিই ঠিকমতো হয়নি। বিশেষ করে ফোর্সের ব্যারাকের জন্য ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও মাত্র দুই বান টিন লাগিয়ে দায়িত্ব শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২টি মডিউল ট্রেন্ডের জন্য বরাদ্দ ছিল ১১ লাখ টাকা। সেখানে কিছু কাজ করা হলেও পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে পাঠানো এসিগুলো লাগানো হয়নি। এসির সংযোগ দিতে তার আর মিস্ত্রি লাগবে বলে খরচ বাঁচাতে এসি না লাগিয়েই কাজ শেষ করা হয়। এসিগুলো এখনো এমআই স্টোররুমে পড়ে আছে। ২৪ ইঞ্চি ড্রেন নির্মাণের জন্য ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু ২৪ ইঞ্চির জায়গায় মাত্র ৬ ইঞ্চি ড্রেন বানিয়ে কাজ সমাপ্ত করা হয়।

মেসার্স তাপস এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স মিশু এন্টারপ্রাইজ এসব মেরামত/সংস্কারসহ অন্য দুটি কাজ করে। মিশু এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মো. জসিম। আর তাপস এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানটিও চলে জসিমেরই নেতৃত্বে।

সূত্র জানায়, উপজাতীয়দের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয় না। শুধু ভ্যাট দিতে হয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে জসিম এক উপজাতির নামে তাপস এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানটি চালু করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে মাহবুব হাসান বদলি হন ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি)। কিন্তু তিনি ২০ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি এপিবিএন থেকে বিদায় নেন। একই বছর ১ অক্টোবর বদলি হয় উপ-অধিনায়ক শাহনেওয়াজ খালেদের। অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুললে শাহনেওয়াজকে বাদ দিয়ে ২৭ ডিসেম্বর নতুন তদারক কমিটি গঠন করা হয়। শাহনেওয়াজকে বাদ দেওয়া হলেও তার আগে বদলি হয়ে যাওয়া অধিনায়ক মাহবুব হাসানকে তদারক কমিটির প্রধান করেন বর্তমান অধিনায়ক আব্দুর রহিম। গত বছরের ডিসেম্বরে সমাপ্তি প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করতে সেটি সাবেক সদস্য সচিব শাহনেওয়াজ খালেদের নতুন কর্মস্থলে পাঠানো হয়। কিন্তু শাহনেওয়াজ খালেদ স্বাক্ষর না করে অনিয়মের কথা উল্লেখ করে গত ১০ ডিসেম্বর নোট অব ডিসেন্ট প্রদান করেন। এর আগে বদলি হয়ে আসার সময় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মিশু এন্টারপ্রাইজের অনিয়মের কথা উল্লেখ করে তার দেওয়া প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্তির সুপারিশও করেছিলেন শাহনেওয়াজ খালেদ।

অভিযোগ রয়েছে, বিশেষ সুবিধা নিয়ে মিশু এন্টারপ্রাইজকে কালো তালিকাভুক্ত করেননি বর্তমান অধিনায়ক আব্দুর রহিম। বরং চলতি অর্থবছরেও এ প্রতিষ্ঠানটিই কাজ করছে।

৬-এপিবিএনের বর্তমান অধিনায়ক পুলিশ সুপার আব্দুর রহিম আমাদের সময়কে বলেন, সদস্য সচিব শাহনেওয়াজ খালেদের অবহেলা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। কারণ কাজে অনিয়ম ছিল যা তার দেখার কথা থাকলেও তিনি দেখেননি। শাহনেওয়াজ সাহেব কাজ ঠিকমতো না দেখায় কাজের মান খারাপ হয়েছে। আমি যতদূর জানি, ওনার বিরুদ্ধে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে অ্যাকশন নেওয়া হতে পারে। তবে অনিয়মের কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা, এ বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি। এ ছাড়া সমাপ্তি প্রতিবেদন তৈরি কমিটি গঠন করার কথা স্বীকার করলেও আগের অধিনায়ককে প্রধান করে তদারক কমিটি গঠনের কথা অস্বীকার করেন বর্তমান অধিনায়ক।

এদিকে নোট অব ডিসেন্টে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহনেওয়াজ খালেদ উল্লেখ করেন, তদারক কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে ১ জুন, ৪ জুলাই ও ৮ জুলাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ৩টি প্রতিবেদন দিয়েছি (ভিডিও ও স্থিরচিত্র সংযুক্ত)। কাজে নানা অনিয়ম (ভিডিও ও স্থিরচিত্র থেকে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে) থাকায় সমাপ্তি প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করা সম্ভব নয়।

জানতে চাইলে ৬-এপিবিএনের তৎকালীন অধিনায়ক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান আমাদের সময়কে বলেন, ‘এসব কাজ তো অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে। নোট অব ডিসেন্ট সময়মতো না দেওয়ায় আমার কিছু করার ছিল না।’ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য না করে পুলিশ সদর দপ্তরে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি। এর পর পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করে তাদের কোনো বক্তব্য জানা যায়নি।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মিশু এন্টারপ্রাইজের মালিক জসিম আমাদের সময়কে বলেন, কাজে অনিয়ম হয়নি। অধিনায়ককে টাকা দেওয়ার কথা সঠিক নয়।

আর তদারক কমিটির সদস্য সচিব শাহনেওয়াজ খালেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, নোট অব ডিসেন্টই আমার বক্তব্য।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877